মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতির মহোৎসব: নেতৃত্বে ওসমান গণি মন্ডল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১ মার্চ, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতির মহোৎসব: নেতৃত্বে ওসমান গণি মন্ডল

কাপাসিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চলছে ঘুষ ও দুর্নীতির মহোৎসব। অফিসটির নেতৃত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ ওসমান গণি মন্ডলের বিরুদ্ধে উঠেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। সেবা নিতে আসা সাধারণ দাতা-গ্রহিতা ও দলিল লেখকরা নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব

সূত্র জানায়, ওসমান গণি মন্ডল ২০০৯ সালের ৭ ডিসেম্বর মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। তবে তার জন্মতারিখ ২৪ জুলাই ১৯৬৬ উল্লেখ থাকায় প্রশ্ন উঠেছে—মাত্র ৭ বছর বয়সে কীভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধায় অংশ নেন? এমন বিতর্কিত তথ্য ও জাল সনদের মাধ্যমে তিনি এই পদে নিয়োগ পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রেও রয়েছে জালিয়াতির অভিযোগ। বায়োডাটায় বি.এ পাশ উল্লেখ থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি এস.এস.সি পাশ বলেই দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এমন জাল সনদ ও মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের মাধ্যমে চাকরি নিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠেন ওসমান গণি মন্ডল।

তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডে পাঁচ কাঠা জায়গায় ছয়তলা একটি বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। কুড়িগ্রামে তার গ্রামের বাড়িতেও রয়েছে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়াও নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে তার অবৈধ সম্পদের বিস্তারিত চিত্র।

এর আগে, বগুড়া সদর ও কেরানীগঞ্জ মডেল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসেও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে জড়িত ছিলেন তিনি। তৎকালীন সময় অর্থনৈতিক দুর্নীতির তদন্ত হলেও তার প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে সেই অভিযোগগুলো আজও আলোর মুখ দেখেনি।

কেরানীগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালীন বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির সঙ্গে অবৈধ চুক্তিতে শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মিনিয়াম সিটি হাউজিংয়ের মালিক তাজুল ইসলামের সঙ্গেও রয়েছে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে শ্রীপুর সাব-রেজিস্ট্রার পদে বদলি হন তিনি। এরপর থেকে দলিলের ধরন বুঝে ঘুষ নির্ধারণ করে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন সেবা প্রার্থীদের। ঘুষ না দিলে দাতাগণকে নাল জমি, আবাসিক কিংবা খাসজমি দেখিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে হয়রানি করা হয়।

এছাড়া বিরোধপূর্ণ জমি ও চলমান মামলার জমিও মোটা টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হিন্দু ধর্মীয় পূজা মণ্ডপের মামলা চলমান জমিও তার আর্থিক স্বার্থে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ জুলাই তিনি অবসরে যাচ্ছেন। ফলে তার দুর্নীতির মাত্রা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরকারী বন বিভাগের জমিও ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন কিছু অসাধু দলিল লেখকের সহায়তায়।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে বড় নেতা দাবি করলেও বর্তমান সরকারের পরিবর্তনের পরে আবার বিএনপি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং দলিল লেখকদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সত্যতা যাচাই করতে সাব-রেজিস্ট্রার ওসমান গণিকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিককে হুমকি দেন ও চাঁদাবাজির মিথ্যা অপবাদ দিতে থাকেন।

এই ঘটনায় সুশাসন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা রক্ষায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কামনা করছে এলাকাবাসী।