রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মামলা ভয় দেখিয়ে প্রতিবেদককে প্রতিবেদন করা থেকে বিরত থাকতে বিভিন্ন সূত্রে হুমকি

সিএমপিসহ বিভিন্ন সরকারি অধিদপ্তরের জাল ছাড়পত্র তৈরি করেছে এলিট কর্পোরেশন

এলিট কর্পোরেশন সরকারি অধিদপ্তরের জাল ছারপত্র তৈরি বিষয়ে নজরদারি নেই প্রশাসনের

আব্দুল্লাহ আল নোমান শুভঃ

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:০২ পিএম

সিএমপিসহ বিভিন্ন সরকারি অধিদপ্তরের জাল ছাড়পত্র তৈরি করেছে  এলিট কর্পোরেশন

১০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব

 

আওয়ামী সরকার থাকাকালীন বিভিন্ন নেতা কর্মীদের হাতে রেখে এলিট কর্পোরেশনের ভুয়া হারবাল পণ্য বাজারজাত করতো কামরুল কায়েস চৌধুরী। ছাত্রজনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খোলস পাল্টে অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যেসব নেতাকর্মীর সহযোগিতায় এ পণ্যগুলো বাজারজাত করতো তাদের ছবি জি এম আই টি ও এলিট কর্পোরেশনের কর্ণধার কামরুল কায়েস চৌধুরী ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। 

 

 

এসব ভুয়া হারবাল পণ্য সেবনে ভোক্তাদের কিডনি নষ্ট হওয়া সহ ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগের ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছেন এলিট কর্পোরেশন। ওজন বৃদ্ধির অনুপযুক্ত হারবাল পণ্য সেবনের ফলে পেশী ক্র্যাম্প, কিডনির ক্ষতি, লিভারের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন, ডায়রিয়া এবং অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি সহ বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ মত মারাত্মক রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানা যায়। ওয়েট গেইন সাপ্লিমেন্ট গুলো এক প্রকার বিষের মতো কাজ করে মানব দেহে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ক্ষতিকর ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও প্রসাধনী। যেগুলো তৈরিতে নেই কোনো অনুমোদন। মানা হচ্ছে না চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো নিয়ম-কানুন। ‘শতভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, বিফলে মূল্য ফেরতে’র ও গ্যারান্টি কার্ড সহ ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছে জীবনঘনিষ্ঠ এসব ভুয়া পণ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবে চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে নকল ও ভেজাল পণ্য সেবনে অসংখ্য মানুষ শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা আরও নতুন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। 

 

বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমকর্মী অনুসন্ধান চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকের বেশ কয়েকটি পেজ অনুসরণ করে ভেষজ ওষুধসহ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির সত্যতা মিলেছে। ওষুধজাতীয় এসব পণ্য মার্কেটিং করার পন্থাও বের করেছে তারা। একেকজন পণ্যটি সেবনের পর শরীরের পরিবর্তন দেখিয়ে ও বিশেষজ্ঞ অথবা সেলিব্রেটিদের মাধ্যমে পেজে এসে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করছেন। 

 

জানা যায়, কোন ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্ট বাজারজাতের আগে মানবদেহে কতটুকু মাত্রায় কার্যকর, ফলাফল পেতে কতটুকু পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে এ বিষয়ে গবেষণা জরুরি। মানবদেহে প্রয়োগের আগে প্রাণীদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দরকার। একই সঙ্গে ওষুধ প্রস্তুতকারক ও গবেষকদের চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে বৈধ সনদ থাকতে হবে। সবশেষ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের ওষুধ সামগ্রী বাজারজাত করা যাবে না।

 

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বর্তমানে ফেসবুকে এ ধরনের শতাধিক পেজ রয়েছে। এর মধ্যে যেসব পেজে বেশি ভিউ বা গ্রাহকের নজর বেশি সে ধরনের অনেকগুলো পেজ শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে একেকটি পেজ একেই ধরনের পণ্য বিক্রি করছে। পেজ গুলো হলো SH Collection BD, Premium Health Supplement ও Weight Gain সহ আরো নানা ধরনের পেজ রয়েছে।

 

এই ন্যাচারাল ফুড বাদাম শেখ,ন্যাচারাল হেলথ ও ন্যাচার ফুড সাপ্লিমেন্ট নামে ভেষজ ওষুধ সেবনে শরীরের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারিড অনিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লক, জন্মগত হার্টের ব্লক, ঘাড়ের ধমনিতে ব্লক, ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাছে।

 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর চতুর্থ অধ্যায় অপরাধ, দণ্ড বিধির অনুযায়ী 

৪৫ অনুচ্ছেদ এর কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ৫০ অনুচ্ছেদে এর কোন ব্যক্তি কোন পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন করিলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

 

 

দৈনিক আজকের বাংলা ধারাবাহিক প্রতিবেদনে প্রথম পর্ব উদ্যোক্তা তৈরির আড়ালে মরণব্যাধি হারবাল পন্য বিক্রি করছে জি এম আই টি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিভিন্ন কথিত সাংবাদিকে দিয়ে প্রতিবেদন বন্ধের প্রস্তাব দেন কামরুল কায়েস। প্রতিবেদক প্রতিবেদন বন্ধের বিষয়ে অস্বীকার জানালে কামরুল কায়েস চৌধুরী ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে মামলার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। শুধু তাতেই থেমে নেই তিনি। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে ও ভয় ভীতি প্রদর্শন ও ভুয়া সাংবাদিক বলে গনমাধ্যমকর্মীকে হেনস্তার স্বীকার করার পায়তারা করছে। 

 

ভুয়া সিএমপি ছাড়পত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) গণমাধ্যম বলেন, পুলিশ কখনোই একটি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দিতে পারে না। আর প্রতিষ্ঠানে ছাড়পত্র দিবে বিএসটিআই। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর ছাড়পত্র যেটি দেখাচ্ছে সেটি জাল হতে পারে। যদি জাল তারপর তো দেখিয়ে কারো সাথে প্রতারণা করে বিষয়টি খতিয়ে দেকে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

 

পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডাঃ ইদ্রিস আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব ভুয়া হারবাল পণ্যের কেমিক্যাল নির্ধারিত পরিমাণে থাকে না কারণ তাদের কাছে পরীক্ষা করার মত কোন ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় পরিমাণ থাকেনা। এই কেমিক্যাল পরিমাণ নির্ধারিত পরিমান না থাকায় ও পরিমাণে গরম মিল থাকায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব পড়তে পারে যেমন ক্যান্সার, হার্ট ব্লক, কলেস্ট্রল মাত্র বেড়ে যাওয়া ও কিডনির ড্যামেজ এর মত ক্ষতিকর প্রভাব করতে পারে। বি এস টি আই যে বিষয়টি আপনি জানিয়েছেন সেটা আসলে অল সংকট ও আইন থাকলেও আইন প্রয়োগের বিলম্বনা কারণে এইসব পণ্যগুলো অনলাইনে বিক্রি করা হয়। এসব পণ্য বেশিরভাগ সময় দোকানপাটে বা সুপারশপে তেমনটি নজরে পড়ে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়ার জন্য এসব পণ্য অনলাইনে ও সোশ্যাল মিডিয়াতে সেলিব্রেটিদের দিয়ে বিজ্ঞাপন সাজিয়ে পণ্যগুলো ভক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আরো একটি বিষয় প্রতিবেদন করার পর মাঝেমধ্যে অনুসন্ধান করাকালীন সাংবাদিকের উপর যে হামলা মামলার হুমকি প্রদান ও হামলা করা তাদের একটি দীর্ঘদিনের কালচার। এসব ভুয়া পণ্য উৎপাদন কারি ও বিক্রয়কারীরা মূলত একটি বিশাল চক্র এ চক্রের মধ্যে কিছু অসাধু প্রশাসন ও কথিত সাংবাদিকরা জড়িত থাকায় এ হামলা, মামলা ও সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ প্রকাশ তাদের নিত্যদিনের কাজ। একজন সাংবাদিক জাতির দর্পণ ও জাতির বিবেক তার কাজের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা না থাকলে আমি মনে করি দেশ কখনোই পরিবর্তন হতে পারবেনা সত্যগুলো সব সময় অপরাধকারীরা দাবিয়ে রাখবে সেই ফেসিস্ট হাসিনা সরকার আমলের যা হয়েছিল সেটি পর্যায়ক্রমে হতে থাকবে। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিলুপ্তির পথে এটি দিয়ে কাউকে ভয় প্রদর্শন করা ভয় ভীতি প্রদর্শন করা উচিত নয় ।