ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর্ব ৪
হাসান সৈকত চট্টগ্রাম প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর, ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
ঢাকা রেল ভবনে বদলি হলেও চট্টগ্রামের পূর্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেন। সিওপিএস পূর্ব দপ্তরে আছেন দপ্তর প্রধান, ডেপুটি ও একজন সহকারি কর্মকর্তা। এরপরও বদলির সত্ত্বেও কেন চট্টগ্রাম ছাড়তে বিলম্ব, তবে কি নিয়োগ বাণিজ্যের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতেই তিনি এখনো চট্টগ্রামে? এমন গুঞ্জন উঠেছে রেল অঙ্গণে।
এদিকে নিয়োগ বানিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন অস্থায়ী গেইট কিপার বরখাস্ত হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে রেলওয়ের উপর মহলের বেশকিছু থলের বিড়ালের নাম। এই সকল অসাধু কর্মকর্তাদের তালিকায় সবার উপরেই আছেন রেলওয়ের এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেন।
রেল সূত্রে জানা যায়, এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেনের বিস্তর সিন্ডিকের মাধ্যমে চলে এই নিয়োগ বাণিজ্য। এছাড়াও উঠে আসে নিয়োগ সিন্ডিকেটে জাকির হোসেনের প্রধান হাতিয়ার সি.টি.এন.এল সাঈদ হোসেন খোকনের নামও।
জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্যের অসমাপ্ত কাজ এবং জাকির হোসেনের অবৈধ অর্ডারে পদোন্নতি দেওয়া সি.টি.এন.এল সাঈদ হোসেন খোকনকে চট্টগ্রাম বদলী করে আনার মিশনে ব্যস্ত এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেন।
ডিটিও চট্টগ্রাম পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় মো. জাকির হোসেনের সাথে সক্ষতা গড়ে উঠে সাইদ হোসেন খোকনের। এই জুটি রুপ নেয় মানিক জোড়ে। এরপর থেকেই তারা যেন হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। রেলওয়েতে গড়ে তোলেন এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ডিটিও’র অধীনে সকল প্রকার বদলী-পদায়ন ও বাসা বরাদ্দের মুলহোতা হয়ে উঠে এই মানিক-জোড়। সাইদ খোকনকে ট্রেন কন্ট্রোলার পদে পদোন্নতি দেওয়ার ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠেন জাকির।
এরপর ডিটিও পদ ছেড়ে ডেপুটি সিওপিএস পদে বদলী হন জাকির। ঢুকেন পদোন্নতি কমিটিতেও। অভিযোগ উঠে, খোকনের লিখিত পরীক্ষার খাতা ঘষামাজা করে পাশ করান জাকির, এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে ব্যাপক মতবিরোধও হয় জাকির হোসেনের। সফল হয় জাকির এই জুটি। এরপর থেকেই দিনেদিনে বাড়তে থাকে সেন্ডিকেটের পরিধি।
চতুর জাকির ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে তৎকালীন আওয়ামী আমলে নেতাদের দিয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন নিয়োগ কমিটিতে নিজের জায়গা করে নেয়। শুরু করেন নিয়োগ বানিজ্য। নিয়োগ বানিজ্যে সফল হওয়ায় জাকির খোকন সহ তার সেন্ডিকেট হয়ে উঠেন বেপরোয়া। এরমধ্যে নব-নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে তার ব্যাপক লোকের চাকুরী হওয়ায় গড়ে তুলেন ট্রাফিক ঐক্য পরিষদ। জাকিরের আশির্বাদ পুষ্ট হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বনে যান সাইদ হোসেন খোকন। আর প্রধান উপদেষ্টা মো. জাকির হেসেন। একজন অফিসার হয়ে কর্মচারী সংগঠনের উপদেষ্টা! এই নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয় রেল পাড়ায়।
এছাড়াও এই সিন্ডিকেটে জড়িত আছেন ডিটিও অফিসের জাহিদ নামে আরো একজন। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বাসা বরাদ্দ দেওয়াই তার কাজ।
ইতোমধ্যে রেলওয়েতে নিয়োগ হওয়া কয়েকটি পদের বিপরিতে দুদকে অভিযোগ দাখিল হলে জাকির সুকৌশলে সাইদ হোসেন খোকনকে বাঁচিয়ে নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, দুদকের হাত থেকে বাচতে খোকন ও জাকিরের এক বন্ধুর নামে থাকা ব্যাংক একাউন্ট (যেখানে তাদের অবৈধ টাকা জমা হতো) তড়িঘড়ি করে বন্ধ করে দেওয়ায় অনুসন্ধানে তা চাপা পড়ে। এছাড়াও মনছুরাবাদ গোল্ডেন টাচ সংলগ্ন আবাসিকে জাকিরের কেনা একাধিক ফ্ল্যাট বিক্রয় করে দুদক অনুসন্ধানও থেকে নিজেকে আড়ালে রাখেন।
এদিকে খোকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্ত কমিটির প্রধান থাকেন মো. জাকির হোসেন। ফলপ্রসূ দীর্ঘ মাস কালক্ষেপনের পর বেকসুর খালাস পান খোকন।
এছাড়াও ঘুষের টাকার ভাগ না নেওয়ায় অফিসের এক কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি ও মারতে যাওয়ার অভিযোগ উঠে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ টিভি চ্যানেলে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশিত হলে রেল অঙ্গণে জাকির ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ব্যাপারে জাকিরের বিরুদ্ধে কমিটি গঠন হলেও আজও ওই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে জাকির হোসেন রেল শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি শেখ মো. লোকমান হোসেনের অত্যান্ত আস্থাভাজন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আইনের তেয়াক্কা না করে সরকারী চাকুরী ও কোর্ট বিল্ডিং এ আইন পেশায় নিয়োজিত লোকমানের মেয়ে জিনিয়া নাসরিন। এ ব্যাপারে নথি উপস্থাপন করা হলেও জাকির দীর্ঘদিন ওই ফাইল নিজের ড্রয়ারে বন্ধী রেখে তাকে সেইফ এক্সিট দেওয়ার চেষ্টা করেন।
অপরদিকে লোকমানের এক নিকট আত্নীয় দুদকের কর্মকর্তা হওয়ায় জাকিরের বিষয়টিও দেখভাল করেন তিনি। লোকমানের পুত্র সাইমুম হোসেন সিনিয়র টিটিইদের মধ্যে জৈষ্ঠতম না হওয়া সত্বেও জাকিরের ক্ষমতায় কর্তৃপক্ষ হেড কোয়াটারে এসআরআই’র দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে জানতে ও সত্যতা নিশ্চিতে এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে মুঠোফেনে সাইদ হোসেন খোকনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই সকল অভিযোগ মিথ্যা। জাকির সাহেব কখনোই কারো ক্ষতি করেননি। কোন একটি চক্র স্বার্থ উদ্ধার করতে না পেরে আমাদের নামে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীর মুঠোফোনে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ব্যস্ততার অযুহাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।